ইভিএম (EVM) মেশিন কী, কিভাবে কাজ করে, সুবিধা
- আপডেট সময় : 11:00:40 pm, Wednesday, 7 September 2022 123 বার পড়া হয়েছে
ইভিএম মেশিন সুবিধা কাজ
ইভিএম মেশিন সুবিধা কাজ-নির্বাচন কথাটির সাথে আমরা সবাই প্রায় ছোট থেকেই পরিচিত। আগে ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটাররা ভোট দিতেন। পরে এই ভোট গননা করতে রাত হত।
রাতে সেই গননার প্রেক্ষিতে ফলাফল দেওয়া হত। মাঝে মাঝে ভোট কেন্দ্র দখলের৷ ঘটনা ঘটে।এই সমস্যার সমাধান এ ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ইভিএম মেশিন নিয়ে অনেকে জানলেও আবার অনেকে জানেন না। আজ আজ৷ আমরা এই৷ পোস্টে জানব ইভিএম মেশিন কি, কিভাবে কাজ করে,এর সুবিধা -অসুবিধা, এর ইতিহাস যাত্রা৷ নিয়ে। ইভিএম মেশিন সুবিধা কাজ
EVM ইভিএম কি?
EVM বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন হলো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে ভোট দেওয়ার মেশিন বা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটিং মেশিন এবং বিভিন্ন ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়।
ইভিএম মেশিন সুবিধা কাজ
এই পদ্ধতিকে সংক্ষেপে ই-ভোটিং বলে। এই পদ্ধতিতে ভোট প্রয়োগের ক্ষেত্রে উন্নত ও উচ্চতর প্রযুক্তি ব্যবহার এর ফলে অতি দ্রুত ব্যালট পেপার গনণা করা যায়।সে সব ভোটার ভোট দিতে অক্ষম তারাও সঠিক ভাবে ভোট দিতে পারবে।
ইভিএম এর প্রয়োগ>
এই ইভিএম যন্ত্র সাধারণত ভোট কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়। তবে ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক, ককম্পিউটার বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ই-ভোটিং দেওয়া যায়।
ইন্টারনেট ভোটিং
সরকারি ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সরাসরি ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট দেওয়া এই ২ পদ্ধতিতে সাধারণত ভোট দেওয়া যেতে পারে। এই ২ পদ্ধতি ছাড়াও দূরবর্তী ভোটারগন ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক, কম্পিউটার বা মোবাইল এর মাধ্যমে ভোট দিতে পারে। যা ইন্টারনেট ভোটিং নামে পরিচিত।
বাংলাদেশে ইভিএম
বুয়েটের আইসিটি বিভাগের ততকালীন বিভাগীয় প্রধান ডা. এসএম লুৎফর কবির ২০০৭ সালে এই ইভিএম তৈরির প্রকল্প তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে জমা দেন।
ইভিএম মেশিন সুবিধা কাজ
পাইলেফ বাংলাদেশ নামে একটি ইভিএম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান প্রকল্প প্রস্তাবনার সাথে জড়িত ছিল।সেই সময় ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের কার্যকরী সংসদ নির্বাচন এ ইভিএম পদ্ধতির সফল ব্যবহার হয়। এর কারণে তারা সরকারের কাছে আবেদন করেন যে, যেন দেশের সকল নির্বাচনে এই ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হয়।
তখন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ছবি
সম্বলিত আইডি কার্ডের কাজ শেষ না হওয়া। কিন্তু ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই ইভিএম ব্যবহার করা হয়। তখন ১৪টি ভোট কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট গ্রহণ করা হয় এবং তাতে সফলতা আসে। বুয়েট ও বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি এর কাছ থেকে ইভিএম মেশিন গুলো নেওয়া হয়েছিল।
কিন্ত পরে কাজী রাকিব উদ্দিন
এর নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ইভিএম মেশিনগুলো রাজশাহী সিটি করপোরেশন এর নির্বাচনে ব্যবহার করলে এতে বিপত্তি সৃষ্টি হয়। একটি ইভিএম মেশিনে হঠাৎ ত্রুটি দেখা যায়।
কিন্তু মেশিন গুলো প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এই ত্রুটির সমাধান বের করতে না পারায় প্রায় সাড়ে ১২০০টি ইভিএম মেশিন বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে কেএম নুরুল হুদা এর নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন নতুন করে ভোট গ্রহণ পদ্ধতি চালু করার লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়।
ইভিএম মেশিন সুবিধা কাজ
তখন এই নির্বাচন কমিশন বিদেশ থেকে ইভিএম মেশিন ক্রয় করে দাবি করে যে, এগুলো আগের চেয়ে অধিক কার্যকরী। তার ফলে ২০১৭ সালে রংপুর ও ২০১৮ সালে খুলনা সিটি নির্বাচনে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হয়। এতে সফলতা আসে।
এর সফলতায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ এ প্রথমভারের মতো ৬টি নির্বাচনী আসনে সম্পুর্ণভাবে ইভিএম এ ভোট গ্রহণ করা হয়।।
আসন ৬টি হল
- ঢাকা -৬
- ঢাকা -১৩
- চট্টগ্রাম -৯
- রংপুর -৩
- খুলনা-২ ও
- সাতক্ষীরা -২
ইভিএম প্রশিক্ষণ
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করেন। তারা এই আধুনিক ভোট গ্রহণ নিয়ে জানেন না। শুধু তাই নয়, শিক্ষিত মানুষের কাছেই এই ভোট গ্রহণ পদ্ধতি অনেক নতুন।
ইভিএম মেশিন সুবিধা কাজ
তাই যাতে গ্রামের মানুষরাও ইভিএম মেশিন এর মাধ্যমে ভোট দিতে পারে তার জন্য নির্বাচন কমিশন গ্রামে গ্রামে অভিজ্ঞ লোক পাঠিয়ে গ্রামের মানুষদের কিভাবে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট দিতে হয় তা প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেছে।
ইভিএম কিভাবে করে
চলুন এবার জেনে নেই এই ইভিএম মেশিন গুলো কিভাবে কাজ করে।
নির্বাচন কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এর কাছে থাকে ইভিএম এর কন্ট্রোল ইউনিট। ইভিএম এর সম্মুখভাগে থাকে একটি ডিজিটাল ডিসপ্লে। এর বিপরীতে থাকে স্টার্ট সুইচ,ব্যালট সুইচ, মেমোরি রিসেট সুইচ,ফাইনাল রেজাল্ট সুইচ এবং ক্লোজ বাটন সহ আরো কিছু সুইচ।
ভোট শুরু করার জন্য স্টার্ট সুইচটি চাপতে হবে।
তারপর ব্যালট সুইচ চেপে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ভোটারকে ভোট দিতে বুথে পাঠান। ব্যালট সুইচ চাপার ফলে ভোট বুথে থাকা ব্যালট ইউনিট চালু হবে এবং ভোটার ভোট দিতে পারবে। ভোটার ভোট দেওয়া সম্পুর্ন করলে এটা আবার সুইচের মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হয়। যার ফলে ভোটার বারবার ভোট দিতে পারে না।
নতুন ভোটার আসলে কন্ট্রোল ইউনিট ইউনিট থেকে আবার ব্যালট ইউনিট চালু করে দেওয়া হয়। ব্যালট ইউনিট এ প্রার্থীর নাম, ছবি ও তার প্রতীক এর ছবি পরপর সাজানো থাকে।
ইভিএম মেশিন সুবিধা কাজ
ভোটার ভোট দিলে ব্যালট ইউনিট এ থাকা কনফার্ম বোতামে চাপ দিয়ে তার দেওয়া ভোটটি কনফার্ম করতে পারে। কনফার্ম বোতামের পাশে আর একটা বোতাম থাকে, যা হল কেনসেল বোতাম।
এই বোতামটা কনফার্ম বোতামে চাপ দেওয়ার আগপর্যন্ত চালু থাকে। ভোটার তার দেওয়া ভোটটি বাতিল করতে পারবেন এই বোতামটা চাপার ফলে। যতক্ষন না তিনি কনফার্ম বোতামে চাপ দেন।
ইভিএম এর সুবিধা
ইভিএম ব্যবহার এর ফলে কোটি কোটি ব্যালট পেপার, পেপার ছাপানোর খরচ, পরিবহনের খরচ & ভোট গনণার সাথে জড়িত লোকের খরচ অনেক কমে যাবে।
একটি বোতামে চাপার ফলে সবগুলো ভোট একাবারে গনণা করা যাবে।একটি মেশিন দিয়ে কয়েকটি ভোট গ্রহণ এর কাজ করা যাবে।
ইভিএম মেশিন সুবিধা কাজ
শুধুমাত্র এর প্রোগ্রাম পরিবর্তন করে একটি ইভিএম মেশিন দিয়ে বিভিন্ন ধাপের ভোট গ্রহণ করা যাবে। ভোট গ্রহণ এর তথ্য প্রায় ১০ বছর ধরে বিকৃত অবস্থায় সংরক্ষিত থাকবে। ভোট দখলকারীরা চাইলে আর জাল ভোট দিতে পারবে না ।
ইভিএম জালিয়াতি
ইভিএম এর অনেক সুবিধা থাকলেও এর রয়েছে অনেক অপবাদ।
অনেকেই মনে করে ইভিএম দিয়ে ভোটে জালিয়াতি করা হয়। যদি নির্বাচনী কর্মকর্তার স্মার্ট কার্ডের নকল করা হয় এবং তা যদি ইভিএম এর প্রোগ্রামকে বিভ্রান্ত করে
একেবারে কোন এক প্রার্থীকে বিপুল পরিমাণ ভোট দিয়ে নতুন করে প্রোগ্রাম রান করা হয় তাহলে পুরো নির্বাচনই নষ্ট হয়ে যাবে। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সী ব্যবহার করে কিছুদূর থেকেও ইভিএম এর এক্সেস নেওয়া যায়।
আন্তর্জাতিক সমালোচনা
বাংলাদেশের ইভিএম মেশিনগুলো & ভারতের মেশিনগুলো কাছাকাছি মানের। কিন্তু ২০১০ সালে একজন মার্কিন আইটি গবেষক দাবি করেন যে,
ভারতের ইভিএম মেশিন গুলো জালিয়াতির প্রতিরোধীক নয়।বিভিন্ন দেশে ইভিএম মেশিন এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ পদ্ধতি চালু আছে।
১৯৬০ দশকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এই ইভিএম মেশিন এর মাধ্যমে ভোট নেওয়া শুরু হয়। ১৯৬৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ পদ্ধতি প্রয়োগ ঘটানো হয়। এরপর বিভিন্ন দেশে ইভিএম মেশিন নিয়ে অনেক পরিক্ষা চালানো হয়।বিভিন্ন কারণে ৮৫% দেশেই এ পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে।
এর পেছনে মেশিন এর পাশাপাশি ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক সমস্যা।
ইভিএম মেশিন এর মাধ্যমে ভোট নেওয়া কতটা যুক্তিপূর্ণ তা এখনো অজানা।
আরো দেখুন>>>>